ভাল কাজের প্রশংসা না করে যে শুধু খারাপ কাজের সমালোচনা করে সে মিথ্যাবাদী, আর খারাপ কাজের সমালোচনা না করে যে শুধু ভাল কাজের প্রশংসা করে সেও মিথ্যাবাদী। তারা দুই মেরুতে থাকলেও তাদের নীতি এক, তাই তারা সমানভাবে অগ্রহণযোগ্য! যেদিন থেকে সমালোচনার দায়িত্ব শত্রুর হাতে চোলে গেলো সেদিন থেকে বন্ধুরাও অনেকটা সমালোচনা করা বাদ দিয়ে দিল। প্রবাদ আছে- “কখনো কখনো নিজের ঢোল নিজেকেই পেটাতে হয়, অন্যে পেটালে ফেটে যেতে পারে!” এইটা একটা শর্ত যুক্ত সত্য প্রবাদ! আমি মনে করি- “নিজের প্রশংসা তো কেবল তার মুখেই শোভা পায়, যে নিজের সমালোচনা করেও আনন্দ পায়”।
ভাল উদ্দেশ্যে সমালোচনা করা ভাল, খারাপ উদ্দেশ্যে প্রশংসা করা খারাপ। অন্যের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিবেশ দ্বারা পরিচালিত হওয়া মানুষের সহজাত প্রবণতা। পৃথিবীর সবাই বা আপনার চারপাশের মানুষগুলো, যেই আচরণ, কথা, মন্তব্য, সমালোচনা বা প্রশংসা করে তা সব সময় আপনার পক্ষে বা অনুকূলে যাবে না, তা সবসময় নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হবে না, হতে পারে এইসব তাদের বেক্তিস্বার্থ চরিতার্থের লক্ষে বা কোনো বিষয় আড়াল করার জন্য বা ঘটনাকে অন্যদিকে প্রভাবিত করার জন্য অথবা আপনার ভালোর জন্য। আর সে জন্যই- “লোকের কথায় কান দেয়া যাবে না” এই কথাও ভুল! মানুষের মনধর্ম এমন যে- “প্রশংসা শুনতে ভাল লাগে আর সমালোচনা মনটাকে করে দেয় বিষাদময়!” মনঃপ্রবণতার দ্বন্দে পরে হেরে যেতে হয় পরিবেশের কাছে, আর এই ক্ষেত্রে পারিপার্শিক সৃষ্ট পরিবেশ এতটাই শক্তিশালী যে শিক্ষাও রক্ষাকবচ হতে পারে না। কিন্তু জ্ঞানীরা প্রশংসা শুনে যেমন আনন্দে মাতোয়ারা হয় না ঠিক তেমনি সমালোচনা শুনেও বিন্দুমাত্র কষ্ট পায়না। কারণ তার একটা চিন্তার আলোকিত জগৎ আছে সেখানে তিনি সবকিছু দেখতে পায়, তাই অনুমান বা অন্যের কথায় নির্ভর করতে হয় না। তাই দিন শেষে শিক্ষিত নয় বরং জ্ঞানীরাই সফল হয়-
“ব্যাপকহারে অধিকাংশ মানুষ পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় কিন্তু অল্প সংখ্যক মানুষ (জ্ঞানী) সেই পরিবেশ তৈরী করতে সমর্থ হয়”।
আলোচনা-সমালোচনা, প্রশংসা-নিন্দা, মন্তব্য-উপহাস যাই হোকনা কেন, সেগুলোকে একই মানদণ্ডের ভিত্তিতে ধরে নিয়ে নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ ভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে সঠিকটা গ্রহণ করার ক্ষমতা আপনার থাকলেও আপনার প্রতি মানুষের আচরণ কেমন হবে তা সবসময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। যেইটা সম্ভব না, বা যেই সমস্যার কোনো সমাধান নাই – ধরে নিতে হবে সেইটা আসলে কোনো সমস্যা না। তাই প্রভাবিত না হয়ে চিন্তা করুন- “জ্ঞানীদের স্বভাব চিন্তা করা”! চিন্তা তো করতেই পারেন কিন্তু সমালোচনা বা নিন্দা সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করবেন কিভাবে?
আপনার বিরুদ্ধে সমালোচনার অনেক কারণই থাকতে পারে, প্রথম কারণ হতে পারে আপনি আসলেই ভুলের মধ্যে আছেন বা আপনারই উচিৎ নিজেকে শুধরানো। যদি এটাই সত্য হয় তাহলে আদৌ মনোকষ্টের কোনো কারণ নাই বরং সমালোচনাকারী ধন্যবাদ প্রাপ্য, এক্ষেত্রে নিন্দুক সেই কাজটাই করেছে যেটা আপনার বন্ধুর করা উচিৎ ছিল। দ্বিতীয় বা পরবর্তী সকল কারণ আপনার প্রতি স্পষ্টতই মিথ্যা অভিযোগ, যার পিছনে রয়েছে দুরভিসন্ধি, মিথ্যাচারিতা, বেক্তি-স্বার্থ বা এরকম নানা কারণ, সেই কারণগুলো কি কি হতে পারে তার একটা সম্ভাব্য তালিকা তৈরী করতে পারেন মনে মনে হিসেবে কোষে, তারপর গ্রহণযোগ্য মিথ্যা কারণগুলো নির্বাচন করে পেয়ে যাবেন মন্তব্যকারীর বেক্তিত্ত, উদ্দেশ্য বা নির্বুদ্ধিতা। এইভাবে উপলব্ধির বিকাশ ঘটালে নিন্দুকের কটু কথায় বা সমালোচকের মন্তব্যে বা পরিবেশের প্রভাব থেকে নিজেকে যেমন রক্ষা করা যায় ঠিক তেমনি কষ্ট পাওয়ার পরিবর্তে বাস্তবতা বুঝতে পারার কারণে অনুভূত হয় আনন্দ, আর এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই অর্জিত হবে সমালোচনা সহ্য করার দারুন মানুষিকতা।
সম্মানিত পাঠক উপরের আলোচনা নিছক আমার কল্পনা প্রসূত চিন্তা, যা সত্য নাও হতে পারে। আপনার চিন্তাগুলো হয়তো আরো সাবলীল ও যুক্তি সঙ্গত তাই ধারাবাহিক ও যৌথ ভাবে আমাদের চিন্তা গুলোকে এগিয়ে নিতে আপনার মূল্যবান মতামত এই লেখাকে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস।