নব্বইয়ের দশক যখন বিদায়ের অপেক্ষায়, আমার কৈশোরের শুরুটাও ছিল ঠিক সে সময়। ক্লাস ফোরে ওঠার আনন্দে যখন একটা পরিবর্তন তখন প্রকৃতির ছন্দেও আসে ভিন্নতা, কোকিল গায় বসন্তের জয়োগান।
এমনি এক দিনে নানা বায়নার পর মা আমাকে বানিয়ে দিলেন লাল রঙের চমৎকার একটি ঘুড়ি। তারপর সেই ঘুড়ি-আনন্দ নির্জন মাঠের রংবেরঙের প্রজাপতি গুলোকেও যেন হার মানাতে থাকে একের পর এক। কিন্তু হঠাৎ কিভাবে যেন আকাশের অসীমতায় সাড়া দিয়ে উধাও হল ঘুড়িটি। রিক্ত মনে শুন্য নাটাই নিয়ে যখন বাসায় ফিরছি, তখনি যেন সান্তনার দূত হয়ে অবতীর্ণ হলেন আমার প্রিয় শিক্ষক মতিউর রহমান। সব কিছু শুনে সেও হলেন শোকাহত, বললেন আমি যদি সেই ঘুড়িটি আঁকতে পারি তবেই আমায় এনে দিবে “চিলাহরিন” নামের একটি ঘুর্কি ।
শিশুসুলভ এ ধরণের নানা প্রবৃত্তির রশদ যোগাতেন আমার বন্ধু প্রতিম শিক্ষক নামের সেই দেবতা। তাকেই একদিন বলতে শুনেছি “বাবা-মা স্বর্গ থেকে আত্মার প্রকাশ ঘটান জমিনে আর সেই আত্মাকে স্বর্গের পথ বাতলে দেন শিক্ষক। ধিরে ধিরে স্যারের সান্নিধ্য প্রাপ্তির অনুভূতি আমাকে যেন পরিণত করে তার পোষা ময়নায়। নির্জন একটি আম গাছের নিচে বাঁশ আর বেতে পাতা যে মাচাটি সেখানেই স্যার বসতেন সকালের চা নিয়ে; আর আমি রেডিও বা টিভির আদলে পাঠ করতাম বাজার থেকে নিয়ে আসা খবরের কাগজ। আর তারি ফাঁকে ফাঁকে তিনি হারিয়ে যেতেন বিভিন্ন ইতিহাস,গল্প,আর কাব্বগাঁথায়। তাঁর হাত ধরেই ৫ম,৬ষ্ঠ,আর ৭ম শ্রেণিতে আমি অর্জন করি বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বের রকমারি উপহার,সাথে বইও!
এমনি ভাবে স্যারের সাথে আমার যে নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক তা থেকে বেড়িয়ে আসাটা ছিল সত্যিই এক প্রকার বিয়োগান্ত নাটক রচনারি নামান্তর। কিন্তু সেই বাস্তবতাটিকে অস্বীকার করার উপায় ছিল না, চলে যেতে হয় অনেক দূরে— একটি জলাঞ্জলিময়ী অস্তিত্ব সঙ্গি করে।
প্রায় এক যুগ আগে হারিয়ে যাওয়া সেই স্যার এখনও আমার সঙ দেয় চিন্তা-চেতনায়, আর অদৃশ্য থেকে দেয় প্রেরণা। জীবনের এই পর্যায়ে আমি আজ বড়ই একা। কোথায় স্যার আপনি??? আজ যে শুধু……… ভীষণ ভাবে আপনাকেই মনে পড়ছে।
একটি কাল্পনিক ছোট গল্প | মেহসান
0